|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
23 Apr 2012 08:56:02 PM Monday BdST |
|
|
|
বিষণ্ণ বিহান
আসাদুল হক খোকন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বিচ্ছিন্নভাবে
গল্প বলতে একরকম ওস্তাদ জহুরদ্দিন। আমরা সাধারণত কোন একটি গল্প বলার আগে
কোন না কোনভাবে এর যৌক্তিক বিশ্বাসযোগ্য যে কোন একটা উপক্রমনিকা টেনে আনি।
তারপর শুরু করি মূল ঘটনা। কিন্তু জহুরদ্দিন এর কোনটিরই ধার ধারে না। বলা
নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই যে কোন সময় যে কোন স্থানে গল্প বলা শুরু করে দেয়।
গল্প
না হয় হঠাৎ করে বলা সম্ভব, কিন্তু গান? এটাও তার দ্বারা খুবই সম্ভব। কখনো
কারো অনুরোধে আবার কখনো আপনা থেকেই। গান বস্তুটা জহুরের কাছে পানি ভাত!
হয়তো একদম সকাল বেলা মামুদ আলির চা-দোকানে বসে কেবলি গরম চা-য়ে ঠোঁট লাগাবে
কোন অপরিচিত কাস্টমার, অমনি জহুর উচ্চস্বরে আহাম্মদ সরকারের একটা ধুয়া
গানের টান দেয়- ‘আ-রে হাকিমপুরের আনছের সরকার/ সে হালায় চুরের
থাইলদ্দা-আ-আ-য়ার’।
বিহান বেলায়ই কি শুরু করলা? মামুদ আলি চেঁচিয়ে ওঠে।
গানের আবার বিকাল-বিহান কি? গান ২৪ ঘণ্টাই গাওন যায়। জহুরের কাছে এসব প্রশ্নের জবাব সব সময় প্রস্তুত।
বিকাল-বিহান না থাকলে রেডো-টেলিবিশনে সারা রাইত দিন খালি গানই বাজাইতো। মামুদ আলিও যুক্তিতে কম যায় না।
আজাইরা
যুক্তি না দেখাইয়া চা দেও। আগে চা খাইয়া পেট ঠাণ্ডা করি, তারপরে সময় পাইলে
তুমার যুক্তির উত্তর দিবারও পারি, আবার মনে না চাইলে নাও দিবার পারি।
মামুদ আলি দিনের শুরুতেই মন কষাকষি করতে চায় না। সে তাই প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চায় দুধ চা দিবে, না কি র’চা? এতদিন ধইরা তুমার দোকানে চা খাই, আর আইজকা জিগাও কি চা খাব? তুমি আসলে দোকান কইরা খাওনের লোক না। না, জিগাইলাম যে, দিলে তো আবার কবা, আমি এইডা খাই না, হেইডা খাই। চায়ের কাপ গরম পানিতে ডুবিয়ে দিতে দিতে মামুদ আলি জবাব দেয়।
হুদাই
তুমারে মানুষে তেরা লোক কয় না বুঝছ? জহুর এবার সত্যিই কিছুটা রেগে যায়।
কিন্তু রাগ সামলে তার মনে হয় একটা উদাহরণ দিয়ে মামুদ আলিকে চোখে আঙ্গুল
দিয়ে বোঝানো দরকার চায়ের দোকানদারি কাকে বলে। পাশ থেকে কে যেন একজন জহুরের কথার সমর্থনও দেয়— আসলেই লোকটা বেশি কথা বলে।
কি? বেশি কথা বলে না? জহুরের সমর্থনকারীর দিকে আঙ্গুল তুলে জানতে চায়।
মামুদ আলি শুধু আস্তে করে বলে— আমি এইহানে কি অন্যায়ডা করলাম?
কি
অন্যায় করছ, তা তুমি বুঝবা না। তুমার খালি হাতে-পায়ে বয়স হইছে, কিন্তু
বুঝার বয়স এখনও তুমার হয় নাই। তাইলে শোন, চা-য়ের দোকানদারি কারে বলে,
তুমারে একটা বাস্তব ঘটনা বলি তাইলেই বুঝতে পারবা।
দুই পা বেঞ্চে
তুলে হাঁটু মুড়ে আরাম করে বসে জহুর শুরু করে— তখন খুব শীত। এইরকম এক
দোকানে চা খাইতে বসছি। বয়স্ক এক লোক, বয়স ধরো ৭০-৮০’র কম না। দোকানে বসার
সাথে সাথে কাছে অইসা ভাল কইরা কাচের গ্লাস ধুইয়া প্রথমে এক গ্লাস পানি
দিলো। তারপর আবার আইসা জিজ্ঞাস করলো কিছু খাব কিনা। বললাম এক কাপ চা হইলেই
চলবে। চা- টা কিভাবে তৈয়ার করলো তা আমি খুব মনোযোগ দিয়া দেখলাম। প্রথমে
ঠাণ্ডা পানি দিয়া একবার ভাল কইরা কাপ ধুইয়া তারপরে আবার গরম পানিতে ধুইলো।
ধুইয়া কাপে কোন ময়লা আছে কিনা বারবার তাকাইয়া পরীক্ষা করলো। এর মইধ্যে এই
একটু পরপর আমার দিকে চাইয়া বলে— চাচা, আর একটু সবুর করন লাগবো। পানিটা
ভালভাবে গরম হইয়া সাড়ে নাই। এরপরে কাপে কেতলি থেকে চা ঢাললো। ডাবল ছাকনি,
আবার চা’র লিকার পরবে? সেই ক্ষমতা নাই। চা বানান শেষ হইলে একটা পিরিচে
দুইটা বিস্কুট, আর একটা পিরিচে একটা পান, সুপারি, খর, জরদা, চুন, মিষ্টি সজ
সব আলাদা আলাদা, আর একটা পিরিচে চা’র কাপ আইনা সামনে দিল। আবার বললো—
চাচা, কিছু মনে করবেন না, একটু দেরি হইয়া গেল। বিনয় কাকে বলে বুঝলা?
এর
নাম হইল দোকানদারি। কাস্টমার আবার আসবো না? তার দোকানে দেখগা, পা ফালানের
জাগা নাই। ব্যবহার, বুঝলা , দোকানদারি শিখনের আগে ব্যবহার শিখন লাগে। আর
তুমি তো কাস্টমারের সাথে এমুন ব্যবহার করো যেন কোনহানকার জমিদার! চা বেচলে
অত জমিদারী চলবো না। কাস্টমাররা নানান কথা বলবো, তুমার কান বন্দ কইরা থাকন
লাগবো।
একটু বিরতি নেয় জহুর, তারপর আবার শুরু করে— কাস্টমারে আর
কি বলব ওর যন্ত্রণায় কোন কথাই বলন যায় না। কাস্টমারের মুখের কথা কাইরা নিয়া
নিজে মাতবুরি করে। কে যেন আচম্বিতে চেঁচিয়ে ওঠে— দূর ফকির , বাদ দেও তো। কি বালের পেচাল পাইরা হুদাই সময় নষ্ট করতাছ। তার চাইয়া একটা গান ধরো।
ওনে বইয়া গান ধরবার কয় কেরা এহন দুপুর সময়? গান গাওনের একটা সময় আছে, বুঝছ না? এবার
আর মামুদ আলিকে পায় কে। সে চেঁচিয়ে ওঠে— এতক্ষণ তো মেলা লেকচার হুনলাম,
আমি কইছিলাম বইলা বিরাট ইতিহাস শুনাইলা। গান গাওনের কোন সময় নাই। এই দুই
ঘণ্টাও হয় নাই। ইয়াকুব এইখানেই রইছে, বলুক তো, কি কথাডা কইছিলাম আমি। আর
তার লিগা দুনিয়ার কথা হুনাইলা।
তুমার সাথে কথা বলাটাই ঠিক না। এই
জন্যেই মজনু পাগলা ব্যবাকের লগে কথাবার্তা কইতো না। জিগাইলে বলতো— পাগল
ছাগলের সাথে তো আর কথা বলা যায় না । যারা মানুষ তাদের সাথে শুধু কথা বলি।
দির্ঘশ্বাস ফেলে জহুর। আসলে এখন বুঝি, সব মানুষের সাথে কথা বলাটা উচিৎ না।
কারণ, আমি বলব একটা আর সে বুঝব আর একটা।
এই জন্যে লতিফ মাস্টার
ছেলেপেলেদের জিগাইতো— বল তো, ঢেকিতে যে দুইজনে দুই পাও দিয়া পার দেয় তাদের
দুইজনের পাও একসাথে পরে ক্যান? পুলাপানে পারতো না। তখন মাস্টারে বইলা
দিতো— কারণ, ওদের দুইজনের মনে মনে ভাব আছে। এই মনে মনে ভাবটাই আসল, বুঝলা?
তা না হইলে মোবাইলের মত রং নাম্বারে কল যাবো। কি বুঝলা? মামুদ আলি কোন জবাব
দেয় না।
লাঠি হাতে কালো চশমা চোখে মামুদ আলির চাচা শুকুর আলি
জহুরের পাশে এসে কুঁজো হয়ে দাঁড়ায়। দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে— মজনুর কথা হুইনা
আগাইয়া আইলাম। কইলাম যে, জহুরের কাছে বইসা দুইডা-চাইট্টা মজনুর কথা হুইনা
আহি।
তা ভালই করছেন। মজনুর মেলা কথা আছে, কয়টা কথা বলব?
আবছা আলোয় বৃদ্ধ শুকুর আলি কালো চশমার ভেতর দিয়ে জহুরদ্দিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বলে— একটা দুইডা কও হুনি।
জহুরদ্দিন
হাড় কাঁপানো শীতে জড়সড় হওয়ার মত চাদর মুড়ি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে। তারপর
গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে বলতে শুরু করে— যখন সে খুব অসুস্থ, তখন আমরা
কযেকজন উনারে দেখতে গেছি টাঙ্গাইল শহরে তার বড় ভাইয়ের বাসায়। গিয়া দেখি
শরীরে কয়ডা হাড্ডি ছাড়া কিচ্ছু নাই।
তার বড় ভাই আমদের দেইখা কাছে
আইসা বসল। বললো— দেখ, তোমরা না খাইয়া- না ঘুমাইয়া শরীরের কি অবস্থা করছে।
আমি কতবার বলছি বাড়িতে যে জমিজমা আছে সেগুলা একটু দেখাশুনা কর, বিয়ে করে
সংসারি হ, শুনলো না। গ্রামে থাকতে ইচ্ছা না করলে আমার বাসায় থাকুক। তোমরাতো
জানো দিনাজপুরেও আল্লার রহমতে আমার অনেক জায়গা জমি আছে। বিশ বছর
চেয়ারম্যান আছিলাম সেখানে। আর টাঙ্গাইলে তো আছেই। ওর কোন কিছুর অভাব আছে?
ওর নিজের নামেও তো মেলা সম্পত্তি। বিক্রি করে খাইলেও শেষ করতে পারবে না।
পাশের বাসাটা বিক্রি করবে, আমি বললাম— এই বাসাটা তোর নামে কিনা দেই। সেটাও
নিবে না। তোমরা ওরে বোঝাও, আল্লাবিল্লা করতেছে করুক। আমার কোনো না নাই।
কিন্তু তা বইলা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা তো আল্লাহ তার ইবাদত করতে বলেন নাই। আজ কম
করে হলে কুড়ি বছর তো হইলো সমস্ত রাত সে ঘুমায় না। এভাবে চলতে থাকলে সে তো
মারা যাবে।
‘মারা তো আপনিও যাবেন। সবাই মারা যাবে। যার যার নিজের
চিন্তা করেন। আর আপনার প্রয়োজন হইলে পাশের বাড়ি আপনি কিনেন। আরো বেশি দরকার
হইলে পুরা টাঙ্গাইল শহর কিন্যা নেন। আমার কোন জায়গা, ধন দৌলতের দরকার নাই।
আমার দরকার শুধু সাড়ে তিন হাত জায়গা। আমার জন্য আপনার কোন চিন্তা করা
লাগবে না। যিনি আমাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তিনিই ভাল জানেন আমারে কোন জায়গায়
রাখবেন।’
তার বড় ভাইয়ের কথা শেষ হইলে অত্যন্ত নরম স্বরে মাথা নিচা
কইরা মজনু সাব কথাগুলা বললেন। তার কথা শুইনা বড় ভাই আর এক মুহূর্ত সেখানে
রইলেন না। উইঠা চইলা গেলেন।
মামুদ আলীর সরব চায়ের দোকনে সাত সকালেই
সবার চোখেমুখে হঠাৎ যেন কেমন ঘন মেঘের মগ্নতা নেমে আসে। গোপনে বানের জলের
মত বাড়তে থাকে মজনুর স্মৃতিভূক নগণ্য মানুষের দল।
সেদিকে লক্ষ্য না
করেই একান্তে জহুরদ্দিন বলে চলে— একবার অনেক রাইতে করটিয়ার হাট থেকে
আসতেছি। তা, রাত্রি তখন ২টা হবে। সাথে রানাগাছার বেল্লাল মাস্টারের ছোট
ভাই ও আরও একজন তার নাম জানি না। গাই আর বাছুর নিয়া হাঁটতে হাঁটতে রাত্রি
হইয়া গেছিল। কইলাম যে চল নদীর পার দিয়া চইলা যাই। বীরনাহালী আর গোসাই
জোয়াইরের মাঝামাঝি আসলে বেল্লাল মাস্টারের ভাই কি জানি একটা দেইখা হঠাৎ
চিল্লানি দিয়া উঠছে। ওইদিকে অন্ধকারও আছে আবার মাইল মাইল জ্যোৎস্না। দূরে
একটা কি জানি মানুষের মত সাদা চাদর গায় দিয়া বইসা আছে বলে মনে হয়। ওদের
বললাম ভয়ের কারণ নাই, আমরা মানুষ ৩ জন। আগে কাছাকাছি যাইয়া দেখি। এদিকে
সামনেও আগাইতেছি আবার একটু একটু ভয়ও করতেছে। কাছাকাছি গেলেই বহু লোকের
জিকিরের শব্দ শুনতে পাইলাম। মনে হইছিলো যেন কয়েক’শ মানুষ জিকির করতেছে।
কিন্তু কাছে গেলে বিষয়টা পরিষ্কার হইল। দেখি আমাদের মজনু সাব একলা একটা
চাদর গায় দিয়া পশ্চিম দিকে মুখ কইরা বইসা আছে আর তার চারদিকে জিকিরের
ধ্বনি— আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু...।
আমি এখনও চিন্তা করি,
রাত্রি ৩টার সময় শীতের মধ্যে বিরান নদীর চরে একা একটা মানুষ কি কইরা থাকতে
পারে? আর আমরা দেখলাম তারে একা, কিন্তু জিকিরের শব্দ শুনলাম শত শত মানুষের।
তাইলে ভেদটা কি? কোথায় তার অবস্থান?
আহ্হারে! পাগলের কথা মনে হইলে
কি বলব, রাইতে আমার দুই চোখ বাইয়া পানি পড়তে পড়তে বালিশ ভিজা যায়। ওর মায়
জিজ্ঞাস করে। আমি বলি— কি জন্যে কান্দি, তা তুমি বুঝবা না। তুমরা কেউই এই
কান্দনের বিষয় বুঝবা না। আল্লাপাক সেই বুঝার শক্তি তুমাদের দেয় নাই।
এই
কারণেই মামুদ আলিরে বলছি— তুমার বুঝার বয়স এখনও হয় নাই। যে বুঝবার সে ৩০
বছরেই বুঝে, আর যে না বুঝবার, সে ৩০০ বছরেও বুঝে না। এই বিষয়টা এমুনি বিষয়।
জহুরের দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সে আফসোস করতে
থাকে— পাগলরে হারাইয়া আমার এমুন লাগছে, আমি তুমাগো তা বুঝাবার পারবো না।
সে সাধ্য আমার নাই। খালি মনে হয়, হায়রে হায়, এই মানুষ আমি এখন কোথায় পাই।
বিশ্বাস করবা না, যখন পাগলের কথা মনে হয়, তখন আমার দুনিয়া অন্ধকার। আমি
এইখানে সেইখানে খুঁজি, পাই না। প্রতিদিন কত মানুষ কত জায়গায় দেখি, তারে আমি
কোথাও দেখি না।
একদিন পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তারে জিগাইলাম— আইচ্ছা, ভালো মানুষ হওয়ার উপায় কি?
বললেন— খুব সহজ। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মনে করবেন, এই ঘুম আমার শেষ ঘুম। আমি আর জাগবো না। দুনিয়ার সৌন্দর্য আর আমি দেখতে পাবো না।
গামছায় চোখ মুছতে মুছতে হঠাৎ কাউকে না বলেই উঠে পরে জহুর। তারপরও নীরবতা ছিন্ন হয় না।
চা
খেতে আসা ১০-১২ জন মানুষের সাথে জহুরের গল্প শুনতে জড়ো হওয়া আরো জন দশেক
মানুষ হঠাৎ টের পায় এতক্ষণ তারা কেমন নেশাগ্রস্ত মাতালের মত বুঁদ হয়েছিল।
মজনুর কথা শুনে তাদের মনেও এক এক করে নানা স্মৃতি উঁকি দেয়। চা বানাতে
বানাতেই নীরবে বারবার চোখ মুছে জহুরের চিরশত্রু মামুদ আলি। বলে— আইজকা
বিহান বেলায়ই ফকির আমারে কান্দাইয়া গেলো!
বাংলাদেশ সময় ২০১০, এপ্রিল ২৩, ২০১২ সম্পাদনা : ফেরদৌস মাহমুদ, শিল্প-সাহিত্য সম্পাদক
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র,
ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে
না।
|
|
|
|