Powered By Blogger

সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১২

বিষণ্ণ বিহান

banglanews24.com logo Robi: an AXIATA company 







প্রচ্ছদ » শিল্প-সাহিত্য














23 Apr 2012   08:56:02 PM   Monday BdST Print this E-mail this

বিষণ্ণ বিহান


আসাদুল হক খোকন
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012April/galpo 120120423210151.jpgবিচ্ছিন্নভাবে গল্প বলতে একরকম ওস্তাদ জহুরদ্দিন। আমরা সাধারণত কোন একটি গল্প বলার আগে কোন না কোনভাবে এর যৌক্তিক বিশ্বাসযোগ্য যে কোন একটা উপক্রমনিকা টেনে আনি। তারপর শুরু করি মূল ঘটনা। কিন্তু জহুরদ্দিন এর কোনটিরই ধার ধারে না। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই যে কোন সময় যে কোন স্থানে গল্প বলা শুরু করে দেয়।

গল্প না হয় হঠাৎ করে বলা সম্ভব, কিন্তু গান? এটাও তার দ্বারা খুবই সম্ভব। কখনো কারো অনুরোধে আবার কখনো আপনা থেকেই। গান বস্তুটা জহুরের কাছে পানি ভাত! হয়তো একদম সকাল বেলা মামুদ আলির চা-দোকানে বসে কেবলি গরম চা-য়ে ঠোঁট লাগাবে কোন অপরিচিত কাস্টমার, অমনি জহুর উচ্চস্বরে  আহাম্মদ সরকারের একটা ধুয়া গানের টান দেয়-  ‘আ-রে হাকিমপুরের আনছের সরকার/ সে হালায় চুরের থাইলদ্দা-আ-আ-য়ার’।

বিহান বেলায়ই কি শুরু করলা? মামুদ আলি চেঁচিয়ে ওঠে।

গানের আবার  বিকাল-বিহান কি? গান ২৪ ঘণ্টাই গাওন যায়। জহুরের কাছে এসব প্রশ্নের জবাব সব সময় প্রস্তুত।

বিকাল-বিহান না থাকলে রেডো-টেলিবিশনে সারা রাইত দিন খালি গানই বাজাইতো। মামুদ আলিও যুক্তিতে কম যায় না।

আজাইরা যুক্তি না দেখাইয়া চা দেও। আগে চা খাইয়া পেট ঠাণ্ডা করি, তারপরে সময় পাইলে তুমার যুক্তির উত্তর দিবারও পারি, আবার মনে না চাইলে নাও দিবার পারি।

মামুদ আলি দিনের শুরুতেই মন কষাকষি করতে চায় না। সে তাই প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চায় দুধ চা দিবে, না কি র’চা?
এতদিন ধইরা তুমার দোকানে চা খাই, আর আইজকা জিগাও কি চা খাব? তুমি আসলে দোকান কইরা খাওনের লোক না।
না, জিগাইলাম যে, দিলে তো আবার কবা, আমি এইডা খাই না,  হেইডা খাই। চায়ের কাপ গরম পানিতে ডুবিয়ে দিতে দিতে মামুদ আলি জবাব দেয়।

হুদাই তুমারে মানুষে তেরা লোক কয় না বুঝছ? জহুর এবার সত্যিই কিছুটা রেগে যায়। কিন্তু রাগ সামলে তার মনে হয় একটা উদাহরণ দিয়ে মামুদ আলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝানো দরকার চায়ের দোকানদারি কাকে বলে।
পাশ থেকে কে যেন একজন  জহুরের কথার সমর্থনও দেয়—  আসলেই লোকটা বেশি কথা বলে।

কি? বেশি কথা বলে না? জহুরের সমর্থনকারীর দিকে আঙ্গুল তুলে জানতে চায়।

মামুদ আলি শুধু আস্তে করে বলে— আমি এইহানে কি অন্যায়ডা করলাম?

কি অন্যায় করছ, তা তুমি বুঝবা না। তুমার খালি হাতে-পায়ে বয়স হইছে, কিন্তু বুঝার বয়স এখনও তুমার হয় নাই। তাইলে শোন, চা-য়ের দোকানদারি  কারে বলে, তুমারে একটা বাস্তব ঘটনা বলি তাইলেই বুঝতে পারবা।

দুই পা বেঞ্চে তুলে হাঁটু মুড়ে আরাম করে বসে জহুর শুরু করে—  তখন খুব শীত। এইরকম এক দোকানে চা খাইতে বসছি। বয়স্ক এক লোক, বয়স ধরো ৭০-৮০’র কম না। দোকানে বসার সাথে সাথে কাছে অইসা ভাল কইরা কাচের গ্লাস ধুইয়া প্রথমে এক গ্লাস পানি দিলো। তারপর আবার আইসা জিজ্ঞাস করলো কিছু খাব কিনা। বললাম এক কাপ চা হইলেই চলবে। চা- টা কিভাবে তৈয়ার করলো তা আমি খুব মনোযোগ দিয়া দেখলাম। প্রথমে ঠাণ্ডা পানি দিয়া একবার ভাল কইরা কাপ ধুইয়া তারপরে আবার গরম পানিতে ধুইলো। ধুইয়া কাপে কোন ময়লা আছে কিনা বারবার তাকাইয়া পরীক্ষা করলো। এর মইধ্যে এই একটু পরপর আমার দিকে চাইয়া বলে—  চাচা, আর একটু সবুর করন লাগবো। পানিটা ভালভাবে গরম হইয়া সাড়ে নাই। এরপরে কাপে কেতলি থেকে চা ঢাললো। ডাবল ছাকনি, আবার চা’র লিকার পরবে? সেই ক্ষমতা নাই। চা বানান শেষ হইলে একটা পিরিচে দুইটা বিস্কুট, আর একটা পিরিচে একটা পান, সুপারি, খর, জরদা, চুন, মিষ্টি সজ সব আলাদা আলাদা,  আর একটা পিরিচে চা’র কাপ  আইনা সামনে দিল। আবার বললো—  চাচা, কিছু মনে করবেন না, একটু দেরি হইয়া গেল।
বিনয় কাকে বলে বুঝলা?

এর নাম হইল দোকানদারি। কাস্টমার  আবার আসবো না? তার দোকানে দেখগা, পা ফালানের জাগা নাই। ব্যবহার, বুঝলা , দোকানদারি শিখনের আগে ব্যবহার শিখন লাগে। আর তুমি তো কাস্টমারের সাথে এমুন ব্যবহার করো যেন কোনহানকার জমিদার!  চা বেচলে অত জমিদারী চলবো না। কাস্টমাররা নানান কথা বলবো, তুমার কান বন্দ কইরা থাকন লাগবো।

একটু বিরতি নেয় জহুর, তারপর আবার শুরু করে—  কাস্টমারে আর কি বলব ওর যন্ত্রণায় কোন কথাই বলন যায় না। কাস্টমারের মুখের কথা কাইরা নিয়া নিজে মাতবুরি করে।
কে যেন আচম্বিতে চেঁচিয়ে ওঠে— দূর ফকির , বাদ দেও তো। কি বালের পেচাল পাইরা হুদাই সময় নষ্ট করতাছ। তার চাইয়া একটা গান ধরো।

ওনে বইয়া গান ধরবার কয় কেরা এহন দুপুর সময়? গান গাওনের একটা সময় আছে,  বুঝছ না?
এবার আর মামুদ আলিকে পায় কে। সে চেঁচিয়ে ওঠে— এতক্ষণ তো মেলা লেকচার হুনলাম, আমি কইছিলাম বইলা বিরাট ইতিহাস শুনাইলা। গান গাওনের কোন সময় নাই। এই দুই ঘণ্টাও হয় নাই। ইয়াকুব এইখানেই রইছে, বলুক তো, কি কথাডা কইছিলাম আমি। আর তার লিগা দুনিয়ার কথা হুনাইলা।

তুমার সাথে কথা বলাটাই ঠিক না। এই জন্যেই মজনু পাগলা ব্যবাকের  লগে কথাবার্তা কইতো না। জিগাইলে বলতো— পাগল ছাগলের সাথে তো আর  কথা বলা যায় না । যারা মানুষ তাদের সাথে শুধু কথা বলি। দির্ঘশ্বাস ফেলে জহুর। আসলে এখন বুঝি, সব মানুষের সাথে কথা বলাটা উচিৎ না। কারণ, আমি বলব একটা আর সে বুঝব আর একটা।

এই জন্যে লতিফ মাস্টার ছেলেপেলেদের জিগাইতো—  বল তো, ঢেকিতে যে দুইজনে দুই পাও দিয়া পার দেয় তাদের দুইজনের পাও একসাথে পরে ক্যান? পুলাপানে পারতো না। তখন মাস্টারে বইলা দিতো— কারণ, ওদের দুইজনের মনে মনে ভাব আছে। এই মনে মনে ভাবটাই আসল, বুঝলা? তা না হইলে মোবাইলের মত রং নাম্বারে কল যাবো। কি বুঝলা? মামুদ আলি কোন জবাব দেয় না।

লাঠি হাতে কালো চশমা চোখে মামুদ আলির চাচা শুকুর আলি জহুরের পাশে এসে কুঁজো হয়ে দাঁড়ায়। দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে—  মজনুর কথা হুইনা আগাইয়া আইলাম। কইলাম যে, জহুরের কাছে বইসা দুইডা-চাইট্টা মজনুর কথা হুইনা আহি।

তা ভালই করছেন। মজনুর মেলা কথা আছে, কয়টা কথা বলব?

আবছা আলোয় বৃদ্ধ শুকুর আলি কালো চশমার ভেতর দিয়ে জহুরদ্দিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বলে— একটা দুইডা কও হুনি।

জহুরদ্দিন হাড় কাঁপানো শীতে জড়সড় হওয়ার মত চাদর মুড়ি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে। তারপর গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে বলতে শুরু করে—  যখন সে খুব অসুস্থ, তখন আমরা কযেকজন উনারে দেখতে গেছি টাঙ্গাইল শহরে তার বড় ভাইয়ের বাসায়। গিয়া দেখি শরীরে কয়ডা হাড্ডি ছাড়া কিচ্ছু নাই।

তার বড় ভাই আমদের দেইখা কাছে আইসা বসল। বললো— দেখ,  তোমরা  না খাইয়া- না ঘুমাইয়া শরীরের কি অবস্থা করছে। আমি কতবার বলছি বাড়িতে যে জমিজমা আছে সেগুলা একটু দেখাশুনা কর, বিয়ে করে সংসারি হ, শুনলো না। গ্রামে থাকতে ইচ্ছা না করলে আমার বাসায় থাকুক। তোমরাতো জানো দিনাজপুরেও আল্লার রহমতে আমার অনেক জায়গা জমি আছে। বিশ বছর চেয়ারম্যান আছিলাম সেখানে। আর টাঙ্গাইলে তো আছেই।  ওর কোন কিছুর অভাব আছে? ওর নিজের নামেও তো  মেলা সম্পত্তি। বিক্রি করে খাইলেও শেষ করতে পারবে না। পাশের বাসাটা বিক্রি করবে, আমি বললাম—  এই বাসাটা তোর নামে কিনা দেই। সেটাও নিবে না। তোমরা ওরে বোঝাও, আল্লাবিল্লা করতেছে করুক। আমার কোনো না নাই। কিন্তু তা বইলা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা তো আল্লাহ তার ইবাদত করতে বলেন নাই। আজ কম করে হলে কুড়ি বছর তো হইলো সমস্ত রাত সে ঘুমায় না। এভাবে চলতে থাকলে সে তো মারা যাবে।

‘মারা তো আপনিও যাবেন। সবাই মারা যাবে। যার যার নিজের চিন্তা করেন। আর আপনার প্রয়োজন হইলে পাশের বাড়ি আপনি কিনেন। আরো বেশি দরকার হইলে পুরা টাঙ্গাইল শহর কিন্যা নেন। আমার কোন জায়গা, ধন দৌলতের দরকার নাই। আমার দরকার শুধু সাড়ে তিন হাত জায়গা। আমার জন্য আপনার কোন চিন্তা করা লাগবে না। যিনি আমাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তিনিই ভাল জানেন আমারে কোন জায়গায় রাখবেন।’

তার বড় ভাইয়ের কথা শেষ হইলে অত্যন্ত নরম স্বরে মাথা নিচা কইরা মজনু সাব কথাগুলা বললেন। তার কথা শুইনা বড় ভাই আর এক মুহূর্ত সেখানে রইলেন না। উইঠা চইলা গেলেন।

মামুদ আলীর সরব চায়ের দোকনে সাত সকালেই সবার  চোখেমুখে হঠাৎ যেন কেমন ঘন মেঘের মগ্নতা নেমে আসে। গোপনে বানের জলের মত বাড়তে থাকে মজনুর স্মৃতিভূক নগণ্য মানুষের দল।

সেদিকে লক্ষ্য না করেই  একান্তে জহুরদ্দিন বলে চলে— একবার অনেক রাইতে করটিয়ার হাট থেকে আসতেছি। তা, রাত্রি তখন ২টা হবে। সাথে রানাগাছার বেল্লাল মাস্টারের ছোট ভাই  ও আরও একজন তার নাম জানি না। গাই আর বাছুর নিয়া হাঁটতে হাঁটতে রাত্রি হইয়া গেছিল। কইলাম যে চল নদীর পার দিয়া চইলা যাই। বীরনাহালী আর গোসাই জোয়াইরের মাঝামাঝি আসলে বেল্লাল মাস্টারের ভাই কি জানি একটা দেইখা হঠাৎ চিল্লানি দিয়া উঠছে। ওইদিকে অন্ধকারও আছে আবার মাইল মাইল জ্যোৎস্না। দূরে একটা কি জানি মানুষের মত সাদা চাদর গায় দিয়া বইসা আছে বলে মনে হয়। ওদের বললাম ভয়ের কারণ নাই, আমরা মানুষ ৩ জন। আগে কাছাকাছি যাইয়া দেখি। এদিকে সামনেও আগাইতেছি আবার একটু একটু ভয়ও করতেছে। কাছাকাছি গেলেই বহু লোকের জিকিরের শব্দ শুনতে পাইলাম। মনে হইছিলো যেন কয়েক’শ মানুষ জিকির করতেছে। কিন্তু কাছে গেলে বিষয়টা পরিষ্কার হইল। দেখি আমাদের মজনু সাব একলা একটা চাদর গায় দিয়া পশ্চিম দিকে মুখ কইরা বইসা আছে আর তার চারদিকে জিকিরের ধ্বনি—  আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু...।

আমি এখনও চিন্তা করি, রাত্রি ৩টার সময় শীতের মধ্যে বিরান নদীর চরে একা একটা মানুষ কি কইরা থাকতে পারে? আর আমরা দেখলাম তারে একা, কিন্তু জিকিরের শব্দ শুনলাম শত শত মানুষের। তাইলে ভেদটা কি? কোথায় তার অবস্থান?

আহ্হারে! পাগলের কথা মনে হইলে কি বলব, রাইতে আমার দুই চোখ বাইয়া পানি পড়তে পড়তে বালিশ ভিজা যায়। ওর মায় জিজ্ঞাস করে। আমি বলি— কি জন্যে কান্দি, তা তুমি বুঝবা না। তুমরা কেউই এই কান্দনের বিষয় বুঝবা না। আল্লাপাক সেই বুঝার শক্তি তুমাদের দেয় নাই।

এই কারণেই মামুদ আলিরে বলছি—  তুমার বুঝার বয়স এখনও হয় নাই। যে বুঝবার সে ৩০ বছরেই বুঝে, আর যে না বুঝবার, সে ৩০০ বছরেও বুঝে না। এই বিষয়টা এমুনি বিষয়।

জহুরের দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সে আফসোস করতে থাকে—  পাগলরে হারাইয়া আমার এমুন লাগছে, আমি তুমাগো তা বুঝাবার পারবো না। সে সাধ্য আমার নাই। খালি মনে হয়, হায়রে হায়, এই মানুষ আমি এখন কোথায় পাই। বিশ্বাস করবা না, যখন পাগলের কথা মনে হয়, তখন আমার দুনিয়া অন্ধকার। আমি এইখানে সেইখানে খুঁজি, পাই না। প্রতিদিন কত মানুষ কত জায়গায় দেখি, তারে আমি কোথাও দেখি না।

একদিন পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তারে জিগাইলাম—  আইচ্ছা, ভালো মানুষ হওয়ার উপায় কি?

বললেন—  খুব সহজ। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মনে করবেন, এই ঘুম আমার শেষ ঘুম। আমি আর জাগবো না। দুনিয়ার সৌন্দর্য  আর আমি দেখতে পাবো না।

গামছায় চোখ মুছতে মুছতে হঠাৎ কাউকে না বলেই উঠে পরে জহুর। তারপরও নীরবতা ছিন্ন হয় না।

চা খেতে আসা ১০-১২ জন মানুষের সাথে জহুরের গল্প শুনতে জড়ো হওয়া আরো জন দশেক মানুষ হঠাৎ টের পায় এতক্ষণ তারা কেমন নেশাগ্রস্ত মাতালের মত বুঁদ হয়েছিল। মজনুর কথা শুনে তাদের মনেও এক এক করে নানা স্মৃতি উঁকি দেয়। চা বানাতে বানাতেই নীরবে বারবার চোখ মুছে জহুরের চিরশত্রু মামুদ আলি। বলে—  আইজকা বিহান বেলায়ই ফকির আমারে কান্দাইয়া গেলো!


বাংলাদেশ সময় ২০১০, এপ্রিল ২৩, ২০১২
সম্পাদনা : ফেরদৌস মাহমুদ, শিল্প-সাহিত্য সম্পাদক
















বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

:: Dainik Destiny :: মুরগি নয়, ডিম পাড়ছে মোরগ!


:: Dainik Destiny :: মুরগি নয়, ডিম পাড়ছে মোরগ!

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতি!

18 Jun 2011   11:51:15 AM   Saturday BdST Print this E-mail this

বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতি!
আসাদুল হক খোকন


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সত্যিই হাস্যকর। বিশ্বে প্রথমবারের মত ‘পৃথিবীর সব চেয়ে হাস্যকর জাতি নির্বাচন’-এ সবাইকে পেছনে ফেলে সম্প্রতি এক ভোট জড়িপে সার্বিক বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতির নির্বাচিত হয়েছে আমেরিকানরা। অন্যদিকে মাথাগরম জাতি হিসেবে পরিচিত জার্মানরা তাদের পূর্ব পরিচিতি ঠিক রেখে অর্জন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে কম হাস্যকর জাতির খেতাব!

ভোট যুদ্ধে ইতালী ও ফ্রান্সকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সব চেয়ে মজার জাতির তকমা পেয়েছে স্পেন।

সামাজিক ওয়েবসাইট বাডু ডট কম (www.badoo.com) ‘বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর ও সবচেয়ে কম হাস্যকর জাতি’ বিষয়ে পৃথিবীর ১৫টি দেশের ৩০ হাজার মানুষকে প্রশ্ন করে। এতে আমেরিকানরা বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতি হিসেবে প্রথম, স্প্যানিশরা দ্বিতীয় এবং ইতালীয়রা তৃতীয় স্থান লাভ করে।

ভোটিংয়ে আমেরিকানরা বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতি হিসেবে প্রথম আর জার্মনরা সর্বশেষ স্থান পাওয়ার ঘটনায় অনেকেরই হয়তো মনেপড়ে যাচ্ছে আমেরিকান ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি ‘জার্মানদের কৌতুকে হাসার মত কিছু নেই’ এর কথা। মার্ক টোয়েন তাহলে সত্যি কথাই বলেছিলেন!

অপরদিকে ‘দি অফিস’ এবং ‘মন্টি পাইথন’ শো দু’টিকে বৃটিশরা ইংরেজি ভাষার শ্রেষ্ঠ হিউমার হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাডু ডট কম-এর মাধ্যমে জানা গেল তারা নিজেদের যতটা মজার জাতি হিসেবে মনে করে আসলে তারা ততটা নয়। বাডু’র ভোট জড়িপে বিশ্বের হাস্যকর জাতির তালিকায় তাদের অবস্থান ১৭ যা তালিকায় ব্রাজিল, ফ্রান্স এবং মেক্সিকানদেরও পরের স্থানে রয়েছে।

তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে বাডু’র উল্টো প্রশ্ন ‘কোন দেশ বিশ্বের সব চেয়ে কম হাস্যকর’ এর উত্তরে বৃটিশদের অবস্থান চতুর্থ এবং তা তুর্কীদেরও পরে।

এ বিষয়ে বাডু’র ডাইরেক্টর অব মার্কেটিং লাইওড প্রাইস যিনি নিজে একজন বৃটিশ, মন্তব্য করেন- ‘আমি ভীত যে এর চেয়ে আরো বেশি হাস্যকর ফলাফল আমরা পেতে পারতাম।’

বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর জাতি হিসেবে আমেরিকানদের এ বিজয়ের পেছনে ‘ফ্রেন্ডস, সিম্পসন্স, ফ্রেইজার, সেনিফিল্ড এবং মার্কস ব্রাদারস থেকে শুরু করে উডি অ্যালেন, স্টিভ মার্টিন, ল্যারি ডেভিড, বেন স্টেলার অথবা হালের টিনা ফে’র মত বেশকিছু টিভি সিরিয়ালের ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে; ব্যাডো’র ‘বিশ্বের সব চেয়ে হাস্যকর জাতি’র ভোট জড়িপে জাতি হিসেবে আমাদের নাম না থাকলেও এ ধরনের অন্য কোনও প্রতিযোগিতায় কিন্তু আমরা পেয়েও যেতে পরি শিরোপা।

এই যেমন ধরুন- দুর্নীর্তি!

এবার নিশ্চয় পাঠক বিরক্তই হলেন আমার ওপর! থাক, তাহলে আর কথা বাড়ালাম না।



বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, ১৮ জুন, ২০১১

কাবুলি কাণ্ড: আনলাকি ‘৩৯’


21 Jun 2011   06:39:36 PM   Tuesday BdST Print this E-mail this

কাবুলি কাণ্ড: আনলাকি ‘৩৯’
আসাদুল হক খোকন


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এতদিন ১৩ সংখ্যাটিকে আমরা ‘অপয়া ১৩’, ‘অশুভ ১৩’ বা সরাসরি আনলাকি থারটিন বলে অবজ্ঞা করে আসলেও এবার ‘৩৯’ সংখ্যাটি এ অপছন্দনীয় তকমা ললাটে ধারণ করতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। দুনিয়ার আর কোথাও না হলেও অন্তত সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় খুদাদাদ আফগানিস্থান অর্থাৎ ঈশ্বরদত্ত আফগানিস্থানে অনেকের কাছেই আজকাল  চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে- ‘থারটি নাইন’ সংখ্যাটি। মূলত, তের’র চেয়ে এটিই এখন তাদের কাছে বে-শক আনলাকি সংখ্যা হিসেবে মনে হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থার খবরে জানা গেছে- রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত আফগানিস্থানের কাবুলে এখন আনলাকি ‘৩৯’ এর ফাঁদে পরে বিশাল অংকের ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গাড়ি বিক্রেতারা। এরই মধ্যে কারো কারো ব্যবসায় লালবাতি জ্বলার উপক্রম! কাবুলে মোটর গাড়ির নাম্বারের সিরিয়ালের প্রথম দু’টি কমন ডিজিট লাকি না হলেও আনলাকি বলে অন্তত চিহ্নিত ছিল না। কিন্তু সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটিই এখন তালেবান  আর মার্কিন সেনার নৈমিত্যিক সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত কাবুলের গাড়ির ড্রাইভার, ক্রেতা এমনকি বিক্রেতাদের কাছেও চরম আনলাকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ঘটনাটি কাবুলে এতই আলোচিত যে, ‘৩৯’ নম্বর লেখা প্লেট লাগানো গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতেও অনেকে বিব্রত বোধ করছেন। এমনকি ছোট শিশুরা পর্যন্ত বলছে-‘ওই দেখ ৩৯ যাচ্ছে, ওই গাড়িটা আনলাকি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী  ইউনাইটেড ন্যাশন্স এর একটি প্রজেক্টে কর্মরত মোহাম্মদ আশরাফের ভাষ্য ঠিক এমনি। তিনি বলেন, ‘এজন্য এখন আমি ও আমার পরিবারের কেউই ওই নম্বর লাগানো মোটরগাড়িতে গাড়িতে চড়ি না।’

কাবুলের একটি গাড়ির শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাওয়েদ এর কাছে শোনা  গেল আনলাকি ৩৯ কে ঘিরে আরও করুন অভিজ্ঞতার কথা। ১০ হাজার ডলারে কেনা টয়োটা করোলা গাড়িটি তিনি শুধুমাত্র ‘৩৯’ নম্বর এর কারণে এখনও বিক্রি করতে পারেননি।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন- এটি যদি আমি মাত্র ৬০০ ডলারেও বিক্রি করতে চাই, তবুও এখন আর কেউ তা কিনতে ইচ্ছুক নয়।
বুঝুন ৩৯ এর ঠেলা!

নিরীহ ‘৩৯’ নম্বরটি হঠাৎ কিভাবে এত দ্রুত কাবুলে  ‘আনলাকি’ হয়ে পড়লো এ প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব কেউ দিতে না পারছে না। কিন্তু বিষয়টি মানছে সবাই। তবে শহরের খোঁজ-খবর রাখনেওয়ালা মানুষজন খোঁজ লাগিয়ে যা জেনেছে তা হলো এই-  কাবুল ও ইরানের সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাতের এক পতিতা সরদারের ঝকমারি টাইপের রেইনবো ডেকোরেটেড একটি বাহারি গাড়ি আছে যার নম্বর ৩৯।

পতিতা সর্দারের রঙচঙে গাড়িটা এতই ফ্যাশন দুরস্ত যে আশপাশের ছেলেবুড়ো অনেকেই নিজেদের প্রিয় গাড়িটির খোল-নলচে পাল্টে ওই গাড়ির ক্লোন করতে উঠেপড়ে লেগে পড়েছে।

অপরদিকে, কাবুলে আমদানি করা নতুন কিছু গাড়িকেও ফ্যাশনেবল করে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য পতিতা সরদারের গাড়ির অনুকরনে রেইনবো ডেকোরেটেড করা হয়।

রক্ষণশীল কাবুলিরা ৩৯-কে আনলাকি করার সমুদয় দোষ চাপাচ্ছেন ওই পতিতা সরদারের ঘাড়ে। তাই- খারাপ কোনও ঘটনা না ঘটিয়েও ওই গাড়ি এবং নাম্বারটি আনলাকি।

আশপাশের লোকজনও সরদার সাহেবকে এখন তার গাড়িটির নম্বর দিয়েই সম্বোধন করে ‘৩৯’ বলে।

এদিকে, রাজধানী কাবুল ও হেরাত এলাকার ভাষা একই রকম হওয়ায় কাবুলে মুখে মুখে  খুব দ্রুত ৩৯ নম্বরটি ছড়িয়ে পড়ে। এবং কাবুলবাসীর  ধারণা- যেহেতে ‘৩৯’ নম্বরের সেই ঝিকঝাক ঝাকানাকা গাড়িটি পতিতা সরদারের, সুতরাং ৩৯ নম্বরটি অবশ্যই আনলাকি। কারণ, যৌনকর্মীর পয়সায় চলা পতিতা সরদারের গাড়ির নম্বরের সঙ্গে নিজের গাড়ির নম্বরের মিল থাকাটা রুশ তাড়ানো আর বুশ ওবামার সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে ঝুঝতে থাকা আফগানিদের জন্য অস্বস্তিকরই বটে।

তবে, আনলাকি ‘৩৯’ বিষয়ে কাবুলের গাড়ি ব্যবসায়ী ইউনিয়নের প্রধান নাজিবুল্লাহ আমিরী সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়েছেন দুর্নীতীবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘাড়ে। তার মতে- এটি সম্পূর্ণ পুলিশের কারসাজি। যে সংখ্যাটি নিয়ে এত হৈচৈ সেই ৩৯ মূলতঃ গাড়ির পেছনের নম্বর প্লেটে লাগানো ৫ডিজিট এর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের অংশ। এটি ওই নম্বর সিরিজের  প্রথম দু’টি ডিজিট মাত্র। আগে এটি ছিল ৩৮। পরে কাবুল পুলিশ  ৩৮দিয়ে শুরু প্রথম দুই ডিজিট এর এই সিরিজটিকে ৩৯ এ পরিবর্তিত করে।

যার ফলে এখন গাড়ির পেছনের নম্বর প্লেটে নতুন রেজিস্ট্রেশন নম্বর এর প্রথম দু’টি নম্বর ৩৮ এর পরিবর্তে ৩৯ লিখতে হচ্ছে যা মিলে যাচ্ছে পতিতা সরদারের গাড়ির নম্বরের সঙ্গে।

নাজিবুল্লাহ সাংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- ‘এ সুযোগে কাবুলের পুলিশ ট্রাফিক বিভাগ ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন নম্বর এর জন্য ২০০ ডলার এবং নম্বর পরিবর্তন করার জন্য নিচ্ছে ৫০০ ডলার। এটা নতুন গাড়ি ক্রেতার নিকট থেকে ট্রাফিক পুলিশের ভিন্ন পন্থায় টু-পাইস কামানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ পুলিশের মতই কাবুল ট্রাফিক পুলিশের উপ-প্রধান  নির্বাহী আকবর খান ব্যবসায়ী ইউনিয়নের প্রধান নাজিবুল্লাহর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন- এসব নিছকই ইরান সীমান্তবর্তী এলাকা হেরাত থেকে আমদানী করা গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।

তবে কাবুলের গাড়ি ব্যবসায় আনলাকি ‘৩৯’ এর বিরূপ প্রভাব ফেলার কথা তিনি স্বীকার করেছেন!

খান সাহেব আরও বলছেন-  ৩৯ আসার আগে আমরা প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্লেট ইস্যু করলেও এখন করছি দিনে মাত্র এক বা দু’টি।
  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ২১ জুন, ২০১১

আজব প্রতিবাদ!




29 Jun 2011   01:59:20 PM   Wednesday BdST Print this E-mail this

আজব প্রতিবাদ!
আসাদুল হক খোকন


গ্রীষ্মের এক শান্ত বিকেল। তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রির মাঝামাঝি। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে থেমে থেমে বৃষ্টির ঘনঘটা। ঠিক এমন সময় সবাইকে অবাক করে শহরের ওয়াটারফ্রন্টের কাছে হাজারো বাইসাইকেল আরোহী জড়ো হতে থাকলো। মাথায় হেলমেট পরা সাইকেল চালকদের শরীরে কাপড়ের ছিটেফোটাও নেই। আর তাদের সঙ্গে সাইকেল চালিকাদের (নারী) কারও কারও গায়ে এক রত্তি কাপড় যা আছে- তাকে ‘নাই’ বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়।

অকস্মাৎ এমন দৃশ্যে আশপাশে উপস্থিত সাধারণের চোখ কপালে ওঠার যোগার। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য হলেও নগ্ন হয়ে সাইকেল চালনার বিস্ময়কর এ দৃশ্যের অবতারণা হয় সবার চোখের সামনে, যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডের রাস্তায়।

যানবাহন ও কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের প্রতিবাদে, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এবং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাইসাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে প্রতীকী সাইকেল চলানার প্রচলন রয়েছে আরো আগে থেকেই। কিন্তু তাই বলে হাজারো সাইকেল চালক একত্রে বিবস্ত্র হয়ে শহরের রাস্তায় সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন এ আবার কেমন প্রতিবাদের ভাষা!  এ প্রশ্নের উত্তরে ওই নগ্ন সাইকেল চালকেরা অবশ্য বলেছেন একটু ভিন্ন কথা। সম্পূর্ন নগ্ন এবং সারা শরীরে ধুসর রঙে ঢাকা কেন জনসন বলেন-“একই সাথে সবুজ ও পরিবেশ সচেতনতায় দৃষ্টি আকর্ষণ এবং পোর্টল্যান্ডের একটি ট্রাডিশন হিসেবে ‘বাৎসরিক নগ্ন সাইকেল চালনা উৎসব’ প্রতিষ্ঠা করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।”

অন্যদের সঙ্গে সুর মিলালেও নগ্ন হয়ে সাইকেল চালনার পক্ষে জান্ডি সিলভাগি আরো একধাপ এগিয়ে। তিনি বলেন- ‘পরিবেশ রক্ষায় নগ্নতার সবগুলো পথেই আমি হাটবো’।

‘এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা এবং এর মাধ্যমে সম্পূর্ন স্বাধীনতা ও প্রাকৃতিক অনুভূতি লাভ করা সম্ভব।’ পোর্টল্যান্ডের নগ্ন সাইকেল চালনা উৎসবে ফনিক্্র থেকে আসা ব্রুকলিন তার  অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন এভাবেই।

তবে; উলঙ্গ হয়ে সাইকেল চালনা পোর্টল্যান্ডে প্রথম হলেও পৃথিবীতে এমন দৃশ্য কিন্তু এটিই প্রথম নয়। নগ্ন সাইকেল চালকদের সর্ব প্রথম দেখা মিলেছিলো সানফ্রান্সিসকোর সিয়াটল এবং কলোরাডোর ব্লাক রক সিটিতে ২০০৪ সনে।
এদিকে, পোর্টল্যান্ডের নগ্ন সাইকেল চালনা উৎসবের করপোরেট স্পন্সর ছিল বীয়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজপোর্ট ব্রিউয়িং। প্রতিষ্ঠানটির ইভেন্ট কর্মকর্তা সিফট্ জানান - এটি মূলত মোটরযান ও (দূষণ সৃষ্টিকারী) জ্বালানীর বিরুদ্ধে বাইসাইকেল প্রেমীদের একটি সাহসী প্রতিবাদ উৎসব।

অবশ্য সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদ আর সাহসের এমন আজীব নমূনা দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে কি না জানা নেই!
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পূর্বে পোর্টলান্ড শহরে সম্পূর্ন নগ্ন হয়ে সাইকেল চালনার কোনও নজির না থাকলেও পোর্টল্যান্ড পুলিশ নগ্নতার অপরাধে ওই উৎসব থেকে  কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি!!

শিহরণের খোঁজে!


03 Jul 2011   06:05:50 PM   Sunday BdST Print this E-mail this

শিহরণের খোঁজে!

আসাদুল হক খোকন


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
পৃথিবীর সব দেশেই কাছে থেকে বন্যপ্রাণী দশর্নের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চিড়িয়াখানা রয়েছে। এসব চিড়িয়াখানা সাধারণত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে দিনের বেলায় এবং রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দর্শনার্থীদের জন্য রাতের বেলায় চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো- সব বন্যপ্রাণীই অন্ধকারে কম বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। নানা রকম বন্য বিশেষ করে ভীতিকর অদ্ভূত ডাক, দৌড়ঝাঁপ দেওয়াসহ এরা সুযোগ পেলেই অন্যদের আক্রমণ করে বসে। এর ফলে মুহূর্তেই ঘটিয়ে ফেলতে পারে বিভৎস ঘটনা।
এসব কারণ বিবেচনা করে দর্শনার্থীদের জন্য রাতে বিশ্বের অন্যসব চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটে। এখানে দিনের সূর্য অস্ত যাবার পর আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার প্রবেশ দ্বার। এসময়টায় খাঁচাবন্দি ভয়ঙ্কর সব জন্তু-জানোয়ার খাঁচার দরজায় আঘাত করতে থাকে জান্তব উম্মত্ততায়- চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ চায় ঠিক এমন সব দৃশ্যই সরাসরি চাক্ষুষ করে শিহরিত আর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠুন দর্শনার্থীরা।
আর প্রকৃতিগতভাবে মানুষ তো শিহরণ-রোমাঞ্চের বনেদী ভক্ত। চিড়িয়াখানাওয়ালারা এ বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে শিহরণ আর রোমাঞ্চ বিতরণের বিচিত্র এ বাণিজ্য।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের বিনোদন কেন্দ্রের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায় আজকাল। তবে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার চিড়িয়াখানাগুলো অন্যতম।
দেখা গেছে, ফিলাডেলফিয়া থেকে ডেনভার পর্যন্ত আমেরিকার সুপরিচিত চিড়িয়াখানাগুলোয় সূর্য ডোবার পর যখন চাঁদ ওঠে তখন থেকে দর্শকরা সারা রাত সেসব চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন। এসব চিড়িয়াখানায় আজকাল সাধারণ নিরীহ প্রাণী থেকে ভয়াল দর্শন খুনে স্বভাবের মাংসাশী প্রাণীও খোলামেলা ছাড়া থাকে। দর্শক সেখানে নিরাপদ খাঁচায় বা গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়ে দেখেন ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’দের ভয়ংকর-সুন্দর নিশিজগৎ।
রাতে চিড়িয়খানা দর্শন বিষয়ে ১৩শ’র অধিক বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাস ‘ফিলাডেলফিয়া জ্যু’ কর্তা জেনিফার ল্যাবোজ বলেন, ‘চিড়িয়াখানাকে নিজের মতো করে দেখতে রাতের কোনও বিকল্প নেই। দর্শকদের জন্য এটি সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা!’
ফিলাডেলফিয়া জু’র রাতের প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে ‘রোয়ারস অ্যান্ড ¯েœায়ারস’ প্রোগ্রামটি চলছে প্রায় ২০ বছর ধরে। তবে শিশুদের জন্য পরিচালিত এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হলো ‘নাইট ফ্লাইট ওভারনাইট’। এ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ৫ থেকে ১২ বছর বয়েসি শিশুরা ভয়-রোমাঞ্চ আর আনন্দের নাগর দোলায় দুলতে দুলতে চিড়িয়াখানার জু’স ট্রি হাউস-এ ঘুমিয়ে পড়ে এবং সারা রাত ঘুমের ভেতরে এক ধরনের স্বপ্নময় ভীতি ও উত্তেজনার ঘোরে সময় কাটে তাদের। কেউ কেউ ঘুমের ঘোরেও অদ্ভূত আর বিচিত্র সব শব্দ শোনার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
‘নাইট ফ্লাইট ওভারনাইট’ নামের এ প্রোগ্রামে অবশ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শিশুদের মধ্যরাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে ¯œ্যাকস এবং ভোরে ব্রেকফাস্ট সরবরাহ করে থাকে।
ডেনভার  জু’র ট্রেসি পিটারসন যিনি ১৯৯৮ থেকে ‘বিস্ট প্রোগ্রাম’ নামে রাতে চিড়িয়াখানা দর্শনের একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছেন তিনি বলেন- ‘অযাচিত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে রাতের বেলায় চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের দেখতে পাওয়ার সুযোগ সত্যি অন্যরকম।’ ৪ হাজারের অধিক বিচিত্র পশুপাখির আবাসস্থল এ চিড়িয়াখানায় বছরে ১৮ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী পদধূলি দেন।
ডেনভার জু’র সারা রাতের বিস্ট প্রোগ্রামে অংশ নিতে চাইলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৪৫ থেকে ৬৫ ডলার আর ফিলাডেলফিয়া জু’র রোয়ারস অ্যান্ড স্নোয়ারস প্রোগ্রামে এ বাবদে গুণতে হবে জনপ্রতি ৬০ডলার মাত্র।
সাধে কী আর দুনিয়ার মানুষ আমেরিকানদের বলে সবচেয়ে ‘হাস্যকার  জাতি’!

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ০৩ জুলাই, ২০১১

৬৬ বছরে ৩৯ বউ, চাই আরও!


08 Jul 2011   04:54:54 PM   Friday BdST Print this E-mail this

৬৬ বছরে ৩৯ বউ, চাই আরও!
আসাদুল হক খোকন


সন্তান-সন্ততিসহ জিয়না চানা ও তার ১০০ ঘরবিশিষ্ট বাড়ি
প্রচলিত আছে ‘কাউকে বিপদে ফেলতে চাও তো বিয়ে করিয়ে দাও’। বিয়ে নিয়ে তাই আমাদের ভাবনার শেষ নেই। বিয়ে তাই অনেকের কাছে রীতিমত ভীতির ব্যাপার- চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলে  ম্যারেজ ফোবিয়া। কিন্তু উত্তর ভারতের জিয়না চানা’র কাছে বিয়ে নিয়ে এসব  ভাবাভাবির কোনও ফুরসৎ নেই।

মিয়ানমারের সীমানা ঘেষা মিজোরাম রাজ্যের উঁচু পাহাড়ি গ্রামের জিয়না চানার বয়স এখন ৬৭ ছুঁই ছুঁই। বয়সে তাকে ৬৭ বছরের বুড়ো ভাবলেও চানা কিন্তু তেমনটি ভাবেন না। বর্তমানে তার বিয়ে করা স্ত্রীর সংখ্যা মাত্র ৩৯ জন। মাত্র বলছি এ কারণে যে, ৬৭ বছরেও চানার আরও বিয়ের করার ইচ্ছেটা মোটেও কমে যায়নি।

সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যমতে, কেউ আগ্রহী হলে তিনি নাকি আরও কয়েকটি বিয়ে করতে একপায়ে খাড়া। ‘প্রতিদিনই আমি আমার পরিবার বর্ধিত করতে চাই এবং আরও বিয়ে করতে চাই’- বিয়ে এবং পরিবার নিয়ে জিয়না তার মনোভাব প্রকাশ করেন এভাবেই।

১৭ বছর বয়েসে চানা প্রথম বিয়ে করেন। তার সেই স্ত্রীর বয়স ছিল তখন তার চেয়ে ৩ বছর বেশি। সে-ই শুরু। তারপর আর থেমে থাকেনি বিয়ে নামের দিল্লিকা লাড্ডুর পৌণপুনিক স্বাদ গ্রহণ করার পালা।

বিয়ের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে চানা বলেন- একটা সময় ছিল যখন আমি বছরে সর্বোচ্চ ১০টি  পর্যন্ত বিয়ে করেছি। চানার ৩৯ জন স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে ৯৪ জন ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়েদের ঘরে জন্ম নেওয়া নাতি-নাতনীর সংখ্যা এরই মধ্যে দাঁড়িয়েছে ৩৩। অর্থাৎ ৬৭ বছরের বুড়ো চানার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা এখন ১৬৭। 

চানার নিজ গ্রামের চারতলা একটি দালানে ১০০টি রুমে বসবাস করছে পরিবারের সব সদস্য। আর তার স্ত্রীরা থাকেন চানার নিজ বেডরুমের পাশের একটি ডরমেটরিতে গাদাগাদি করে। তবে স্থানীয়রা জানান, সব সময় স্ত্রীদের অন্তত ৭-৮ জন তার চারপাশ ঘিরে থাকুক-চানার পছন্দ এমনটিই।

১৬৭ সদস্যের বিশাল এ পরিবারের প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন পড়ে কমপক্সে ৯১ কেজি চাল এবং ৫৯ কেজি আলু যার অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা এবং বাকি তার অনুসারিদের অনুদানের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়।

১৯৪২ সালে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বনকারী জিয়না চানা পরে নিজেই একটি ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। বহুবিবাহে বিশ্বাসী চানা মনে করেন- বহুবিবাহের মাধ্যমে তার প্রবর্তিত বিশেষ খ্রিস্ট ধর্ম এক সময় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আর মূলতঃ এ কারণেই নাকি চানা ৩৯ টি বিয়ে করেছেন!

অন্যায় বাড়াবাড়ি জায়েজ করার অসাধারণ অজুহাত বটে!